বিশ্বের ধনীতম পরিবার: ওয়ালটন পরিবার শীর্ষে, তালিকায় ভারতীয় আম্বানি ও মিস্ত্রি পরিবার

২০২৪ সালে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী পরিবারের তালিকা প্রকাশ করেছে অর্থনীতি বিষয়ক বিখ্যাত সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ। এই তালিকায় স্থান পেয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মোট ২৫টি ধনী পরিবার। এই তালিকার শীর্ষস্থান দখল করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ালটন পরিবার। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল নাহিয়ান পরিবার। এই তালিকায় ভারতের দুটি পরিবার, আম্বানি এবং শাপুরজি পলোনজি মিস্ত্রি, স্থান পেয়েছে যথাক্রমে অষ্টম ও তেইশতম স্থানে।

ওয়ালটন পরিবার: শীর্ষস্থানের গল্প

২০২৪ সালের শেষে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী পরিবার হিসেবে উঠে এসেছে ওয়ালটন পরিবার। এই পরিবারের মোট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৩২.৪ বিলিয়ন ডলার। ব্লুমবার্গের তথ্য অনুযায়ী, ওয়ালমার্ট কোম্পানির ৪৬% শেয়ার রয়েছে এই পরিবারের হাতে। ওয়ালমার্টের ব্যবসার সাফল্যই তাদের সম্পদের মূল উৎস।

ওয়ালটন পরিবারের ধনসম্পদ বাড়ার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে ওয়ালমার্টের শেয়ারের দাম বৃদ্ধি। ২০২৪ সালের ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ওয়ালমার্টের শেয়ারের মূল্য ৮০% বেড়েছে। এই বৃদ্ধি তাদের সম্মিলিত সম্পদকে এক বছরে ১৭২.৭ বিলিয়ন ডলার বাড়িয়ে দিয়েছে। উক্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, পরিবারের সম্পদ বৃদ্ধির গতি ছিল দিনে প্রায় ৪৭৩.২ মিলিয়ন ডলার বা প্রতি মিনিটে ৩২৮,৫৭৭ ডলার।

বিশ্বের শীর্ষ পাঁচ ধনী পরিবার

ব্লুমবার্গের ধনী পরিবারের তালিকায় প্রথম পাঁচটি অবস্থান দখল করেছে যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার এবং ফ্রান্সের পরিবারগুলো।

১. ওয়ালটন পরিবার (ওয়ালমার্ট): ৪৩২.৪ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ নিয়ে এই পরিবার তালিকার শীর্ষে। তাদের তিন প্রজন্মের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন। ওয়ালমার্টের বিশ্বজুড়ে ১০,৬০০টিরও বেশি স্টোর রয়েছে।

২. আল নাহিয়ান পরিবার (সংযুক্ত আরব আমিরাত): ৩২৩.৯ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ নিয়ে তারা তালিকার দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করছেন। তেলসমৃদ্ধ এই পরিবারটি আবুধাবির শেয়ারবাজারের ৬৫% নিয়ন্ত্রণ করে।

৩. আল থানি পরিবার (কাতার): তৃতীয় অবস্থানে থাকা এই পরিবারের সম্পদের পরিমাণ ১৭২.৯ বিলিয়ন ডলার। তাদের সম্পদের মূল উৎস তেল ও গ্যাস।

4. হারমেস পরিবার (ফ্রান্স): বিলাসবহুল পণ্য উৎপাদনকারী এই পরিবারের সম্পদের পরিমাণ ১৭০.৬ বিলিয়ন ডলার।


5. কোখ পরিবার (যুক্তরাষ্ট্র): ১৪৮.৫ বিলিয়ন ডলারের মালিক এই পরিবার তেলের ব্যবসায় সফল তিন প্রজন্মের প্রতিনিধিত্ব করে।

আরও পড়ুন :  সরকারি চাকরিজীবী যুবককে বন্দুকের মুখে অপহরণ ও জোরপূর্বক বিয়ে!

ভারতের দুটি ধনী পরিবার

বিশ্বের শীর্ষ ধনী পরিবারের তালিকায় ভারত থেকেও দুটি পরিবারের নাম উঠে এসেছে।

১. আম্বানি পরিবার: মুকেশ আম্বানির পরিবার রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের মাধ্যমে সম্পদ অর্জন করেছে। তালিকায় তারা অষ্টম স্থানে রয়েছে। তাদের সম্পদের পরিমাণ ৯৯.৬ বিলিয়ন ডলার।

২. শাপুরজি পলোনজি মিস্ত্রি পরিবার: পাঁচ প্রজন্মের এই পরিবার ২৩তম স্থানে রয়েছে। তাদের সম্পদের পরিমাণ ৪১.৪ বিলিয়ন ডলার।

অন্যান্য উল্লেখযোগ্য পরিবার

বিশ্বের ধনী পরিবারের তালিকার শীর্ষ ১৫-এ আরও রয়েছে সৌদি আরবের আল সাউদ পরিবার, ফ্রান্সের ভেরথেইমার পরিবার এবং যুক্তরাষ্ট্রের থমসন পরিবার।

শীর্ষ ১৫ ধনী পরিবারের তালিকা (২০২৪):

১. ওয়ালটন (৪৩২.৪ বিলিয়ন ডলার)
২. আল নাহিয়ান (৩২৩.৯ বিলিয়ন ডলার)
৩. আল থানি (১৭২.৯ বিলিয়ন ডলার)
৪. হারমেস (১৭০.৬ বিলিয়ন ডলার)
৫. কোখ (১৪৮.৫ বিলিয়ন ডলার)
৬. আল সাউদ (১৪০ বিলিয়ন ডলার)
৭. মার্স (১৩৩.৮ বিলিয়ন ডলার)
৮. আম্বানি (৯৯.৬ বিলিয়ন ডলার)
৯. ভেরথেইমার (৮৮ বিলিয়ন ডলার)
১০. থমসন (৮৭.১ বিলিয়ন ডলার)
১১. জনসন (৭২.৪ বিলিয়ন ডলার)
১২. আলব্রেখট (৬০.২ বিলিয়ন ডলার)
১৩. প্রিৎসকার (৫৯.৪ বিলিয়ন ডলার)
১৪. কারগিল-ম্যাকমিলান (৫৬ বিলিয়ন ডলার)
১৫. ওফার (৫৫.৬ বিলিয়ন ডলার)

কেন গুরুত্বপূর্ণ এই তালিকা?

বিশ্ব অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি বুঝতে ধনী পরিবারের এই তালিকা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি দেখায় কিভাবে বিভিন্ন অঞ্চলের শিল্প, ব্যবসা এবং সম্পদ বিশ্বজুড়ে প্রভাব বিস্তার করছে।

ওয়ালটন পরিবারের শীর্ষে ফেরা এবং ভারতের আম্বানি ও মিস্ত্রি পরিবারের তালিকায় স্থান পাওয়া ভারতীয়দের গর্বিত করে। এই তথ্য সাধারণ মানুষের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি বিশ্ব অর্থনীতির বৈচিত্র্য ও শক্তিমত্তা তুলে ধরে।

বিশ্বের ধনী পরিবারগুলোর এই তালিকা শুধু সম্পদের হিসাব নয়; বরং এটি তাদের ব্যবসায়িক সাফল্যের গল্পও বলে। ২০২৪ সালে ওয়ালটন পরিবারের শীর্ষস্থান ধরে রাখা দেখায়, ধনী পরিবারগুলোর অর্থনৈতিক ক্ষমতা কতটা গভীর এবং বিশ্বব্যাপী ব্যবসার কৌশল কীভাবে তাদের সম্পদ বৃদ্ধি করে। অন্যদিকে, ভারতের দুই পরিবার এই তালিকায় জায়গা করে নেওয়া এশিয়া মহাদেশের অর্থনৈতিক সাফল্যের প্রতীক।

আরও পড়ুন :  যুক্তরাষ্ট্রে ওপেন এআইয়ের তথ্য ফাঁসকারী ভারতীয় বংশোদ্ভূত তরুণের রহস্যজনক মৃত্যু