ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বহুকাল ধরে বিশ্ববাসীর মনোযোগ কেড়ে নিয়েছে। মহাকাব্য রামায়ণ এবং মহাভারত সেই ঐতিহ্যের দুটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কুয়েতের দুই প্রখ্যাত লেখক ও প্রকাশকের উদ্যোগে এই দুটি মহাকাব্যের আরবি ভাষায় অনুবাদ ও প্রকাশ ভারতীয় সংস্কৃতির আন্তর্জাতিক প্রসারে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
আরবি অনুবাদক ও প্রকাশকদের উদ্যোগ
“রামায়ণ” এবং “মহাভারত” এর আরবি অনুবাদ করেছেন আবদুল্লাহ ব্যারন, এবং এই কাজ প্রকাশ করেছেন আবদুল লতিফ আলনেসেফ। কুয়েত শহরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করে তারা তাদের কাজের বিস্তারিত সব তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী মোদি তাদের এই উদ্যোগকে ভারতীয় সংস্কৃতির প্রসারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, “রামায়ণ এবং মহাভারত আরবি ভাষায় অনুবাদ দেখে আমি অত্যন্ত খুশি। আবদুল্লাহ আল-বারন এবং আবদুললতিফ আল-নিসফের প্রচেষ্টা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। তাদের উদ্যোগ ভারতীয় সংস্কৃতির বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তাকে তুলে ধরে।” প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্য কেবল এই উদ্যোগকে উৎসাহিত করাই নয়, দুই দেশের সংস্কৃতির মধ্যকার মেলবন্ধনও আরও মজবুত করে।
রামায়ণ ও মহাভারতের গুরুত্ব
রামায়ণ এবং মহাভারত শুধু দুটি কাহিনী নয়, এটি ভারতীয় সমাজ ও সংস্কৃতির মূল ভিত্তি। রামায়ণ রামের ন্যায়, কর্তব্য, এবং মানবিক গুণাবলির প্রতীক, যেখানে মহাভারত জীবনের জটিলতা, নৈতিক দ্বন্দ্ব, এবং ধর্মীয় নির্দেশনার এক মহাগাথা। এই মহাকাব্যগুলো ভারতীয় সমাজে কেবল সাহিত্যিক কীর্তি হিসেবে নয়, একটি দার্শনিক ও নৈতিক দিকনির্দেশক হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ।
আরবি ভাষায় অনুবাদের গুরুত্ব
আরবি বর্তমান বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী ভাষা। রামায়ণ ও মহাভারতের আরবি অনুবাদ ভারতীয় সংস্কৃতির বার্তা আরবি ভাষাভাষী দেশগুলোতে ছড়িয়ে দেবে। এই উদ্যোগ কেবল পাঠকদের ভারতীয় সাহিত্য সম্পর্কে অবগতই করবে না, বরং ভারত ও আরব বিশ্বের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময়ও বাড়াবে।
আবদুল্লাহ আল-বারন ও আবদুললতিফ আলনেসেফের প্রচেষ্টা
অনুবাদক আবদুল্লাহ আল-বারন বলেন, “এই মহাকাব্যগুলো অনুবাদ করার মাধ্যমে আমি ভারতীয় সংস্কৃতির গভীরতা উপলব্ধি করেছি। আমার ইচ্ছা ছিল আরবি ভাষাভাষীদের এই অসাধারণ সাহিত্যিক কাজের সঙ্গে পরিচিত করা।”
প্রকাশক আবদুললতিফ আলনেসেফ বলেন, “আমাদের উদ্দেশ্য ছিল রামায়ণ ও মহাভারতের মূল কাহিনী এবং বার্তা অক্ষুণ্ণ রেখে আরবি পাঠকদের জন্য উপস্থাপন করা। এটি আরব বিশ্বে ভারতীয় সাহিত্যিক ঐতিহ্যের প্রতি আগ্রহ বাড়াবে বলে আমি আশাবাদী।”
বিশ্বব্যাপী ভারতীয় সংস্কৃতির প্রসার
ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরার জন্য বর্তমানে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রামায়ণ ও মহাভারতের আরবি অনুবাদ সেই উদ্যোগেরই একটি ছোট্ট অংশ। এই মহাকাব্যগুলো শুধু সাহিত্য নয়, এটি ভারতের ইতিহাস, ধর্ম, এবং নৈতিক শিক্ষার ধারক। আরবি ভাষায় প্রকাশিত হওয়ার মাধ্যমে এগুলো একটি নতুন পাঠক শ্রেণির কাছে পৌঁছে যাবে।
আরব ও ভারতের সম্পর্কের মজবুত ভিত্তি
ভারত ও আরব বিশ্বের মধ্যে ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। এই উদ্যোগ সেই সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করবে। ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতি আরব বিশ্বে আগ্রহ বাড়ানোর মাধ্যমে এই উদ্যোগ একটি নতুন অধ্যায় সৃষ্টি করেছে।
রামায়ণ এবং মহাভারতের আরবি অনুবাদ শুধু একটি অনুবাদ প্রকল্প নয়; এটি ভারতীয় সংস্কৃতির আন্তর্জাতিকীকরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আবদুল্লাহ আল-বারন এবং আবদুললতিফ আলনেসেফের এই উদ্যোগ বিশ্বজুড়ে ভারতীয় সংস্কৃতির গুরুত্ব ও জনপ্রিয়তা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে। এই প্রচেষ্টা ভারতীয় ও আরব সংস্কৃতির মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করে দুটি অঞ্চলের সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করবে।