আজ ১৬ ডিসেম্বর: ৫৪তম মহান বিজয় দিবস। ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১—এই দিনটি বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক অনন্য দিন। এটি শুধুমাত্র একটি তারিখ নয়, এটি বাঙালির সাহস, আত্মত্যাগ এবং বিজয়ের প্রতীক। আজ আমরা ৫৪তম মহান বিজয় দিবস উদযাপন করছি। এই দিনটি আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয় সেই মুক্তিযোদ্ধাদের কথা, যাঁরা প্রাণ দিয়ে আমাদের জন্য স্বাধীনতার সূর্য এনে দিয়েছেন।
বিজয়ের পটভূমি
১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর পাকিস্তানের জন্ম হলেও পূর্ব বাংলার মানুষের জন্য প্রকৃত অর্থে কোনো স্বাধীনতা আসেনি। বাংলা ভাষার প্রতি অবজ্ঞা, অর্থনৈতিক বৈষম্য, সাংস্কৃতিক শোষণ এবং রাজনৈতিক দমননীতি পূর্ব বাংলার মানুষকে অসন্তুষ্ট করে তোলে। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান—পূর্ব বাংলার মানুষ বারবার তাদের অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলনে নামেন।
১৯৭০ সালের নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা হস্তান্তরে গড়িমসি শুরু করে। এই বৈষম্য ও দমননীতির বিরুদ্ধে পূর্ব বাংলার মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়ে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঢাকায় গণহত্যা শুরু করে। এর মধ্য দিয়ে শুরু হয় আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ।
মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এই ঘোষণার পরই শুরু হয় দীর্ঘ ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধ। লক্ষ লক্ষ মানুষ তাদের প্রাণ, সম্পদ এবং সময় উৎসর্গ করে এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশের মানুষ দুটি ভাগে বিভক্ত ছিল—একদল সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেয়, অন্যদল শরণার্থী হয়ে ভারতের বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়।
মুক্তিযুদ্ধে ভারত আমাদের পাশে দাঁড়ায়। মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর যৌথ আক্রমণের ফলে পাকিস্তানি সেনারা ধ্বংসের মুখে পড়ে। অবশেষে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার জেনারেল নিয়াজি প্রায় ৯৩,০০০ সৈন্য নিয়ে আত্মসমর্পণ করেন। এই দিন বাঙালি জাতি তাদের বহু কাঙ্ক্ষিত বিজয় অর্জন করে।
বিজয়ের গুরুত্ব
বিজয় দিবস বাঙালির জন্য শুধুমাত্র আনন্দের দিন নয়, এটি আমাদের দায়িত্ববোধেরও দিন। এই বিজয়ের মাধ্যমে আমরা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র পেয়েছি, যেখানে আমরা আমাদের ভাষা, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য চর্চা করতে পারি। তবে স্বাধীনতার সঠিক মূল্যায়ন তখনই সম্ভব, যখন আমরা আমাদের দেশকে শোষণ, দুর্নীতি এবং বৈষম্যমুক্ত করতে পারব।
শহীদদের আত্মত্যাগ
বিজয়ের জন্য আমাদের অনেক দাম দিতে হয়েছে। প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষ তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। ২ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমহানি ঘটেছে। আমরা যখন বিজয় দিবস পালন করি, তখন আমাদের উচিত এই শহীদদের কথা গভীরভাবে স্মরণ করা। তাদের আত্মত্যাগের কারণেই আজ আমরা স্বাধীন।
আজকের প্রেক্ষাপট
স্বাধীনতার ৫৪ বছর পর আমরা অনেক কিছু অর্জন করেছি। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রযুক্তি এবং অর্থনীতিতে বাংলাদেশ আজ অনেক দূর এগিয়েছে। তবে আমাদের এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। দারিদ্র্য, বৈষম্য এবং দুর্নীতি মুক্ত একটি দেশ গড়ে তুলতে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
নতুন প্রজন্মের ভূমিকা
বিজয় দিবস নতুন প্রজন্মের কাছে একটি বার্তা বহন করে। তারা যেন মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে পারে এবং সেই ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশের উন্নয়নে কাজ করে।
১৬ ডিসেম্বর আমাদের জীবনের প্রতিটি দিনকে অর্থবহ করার প্রতিশ্রুতির দিন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আমাদের দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। স্বাধীনতার এই অর্জনকে ধরে রাখতে হলে আমাদের প্রত্যেককে নিজের জায়গা থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। বিজয়ের এই মহান দিনে আমরা শপথ করি, দেশকে ভালোবেসে এগিয়ে নিয়ে যাব।
আজকের এই মহান দিনটি উদযাপন করি আত্মমর্যাদায়। Newzbangla24x7 এর পক্ষ থেকে সবাইকে মহান বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা ও শুভকামনা।