স্কুল ভর্তির লটারি আজ, যেভাবে জানা যাবে ফলাফল

বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি স্কুলে শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য আজ মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) লটারির ফলাফল প্রকাশিত হবে। প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী ভর্তির এ লটারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে আয়োজিত হবে। শিক্ষার্থীরা যে মোবাইল ফোন নম্বর ব্যবহার করে ভর্তির আবেদন করেছিল, সেই নম্বরে এসএমএসের মাধ্যমে ফলাফল জানিয়ে দেওয়া হবে। এছাড়াও নির্ধারিত ওয়েবসাইটে গিয়েও লটারির ফলাফল দেখা যাবে।

সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে এ বছর সারাদেশে প্রায় ১০ লাখ শিক্ষার্থী প্রথম থেকে নবম শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন করেছে। এদিকে সারা দেশে মোট ১১ লাখ ১৬ হাজার ৩৮৯টি আসন ফাঁকা আছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ আসন বেসরকারি স্কুলে। শিক্ষার্থীদের আবেদন ও লটারির প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পরও অনেক বেসরকারি স্কুলে আসন ফাঁকা থেকে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ভর্তির আবেদন প্রক্রিয়া

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) সূত্রে জানা যায়, গত ১২ নভেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা অনলাইনের মাধ্যমে স্কুলে ভর্তির আবেদন করার সুযোগ পায়। ১৮ দিনের মধ্যে সারাদেশে সরকারি ও বেসরকারি স্কুলে মোট ৯ লাখ ৮৩ হাজার ৫৩৯ জন শিক্ষার্থী আবেদন করে।

অনলাইনে আবেদন করার নিয়ম বেশ সহজ ছিল। শিক্ষার্থীদের একটি নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে গিয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে আবেদন করতে হতো। আবেদনকারীদেরকে পাঁচটি স্কুল পছন্দ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। লটারির মাধ্যমে যে স্কুলে ভর্তির সুযোগ মিলবে, সেখানে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে।

কীভাবে জানা যাবে লটারির ফলাফল?

ভর্তির লটারির ফলাফল জানার জন্য দুটি পদ্ধতি রয়েছে :

১. এসএমএসের মাধ্যমে : শিক্ষার্থীরা যেই মোবাইল নম্বর দিয়ে আবেদন করেছে, সেই নম্বরে স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি এসএমএস পাঠানো হবে। সেখানে লটারির ফলাফল জানানো হবে।

২. অনলাইনে ওয়েবসাইটে : নির্ধারিত ওয়েবসাইটে গিয়ে শিক্ষার্থীর আবেদন নম্বর বা মোবাইল নম্বর দিয়ে ফলাফল দেখা যাবে।

এই দুই পদ্ধতিতে লটারির ফলাফল জানানোয় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জন্য সহজ হয়েছে।

আরও পড়ুন :  আজ ১৪ই ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস

আবেদনকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ও আসন সংখ্যা

এবারের স্কুল ভর্তির জন্য প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত মোট আসন সংখ্যা ১১ লাখ ১৬ হাজার ৩৮৯টি। এর মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি স্কুল মিলিয়ে মোট আবেদনকারীর সংখ্যা ৯ লাখ ৮৩ হাজার ৫৩৯ জন।

এই হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এখনও কিছু আসন ফাঁকা থাকবে। বিশেষ করে বেসরকারি স্কুলগুলোতে ভর্তির পরও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আসন খালি থাকবে। অনেক সময় প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্কুলে ভর্তির আবেদন কম হয়। তাই এসব স্কুলে আসন খালি থাকার প্রবণতা দেখা যায়।

লটারি পদ্ধতি ও স্বচ্ছতা

সরকারি স্কুলের ভর্তি প্রক্রিয়া স্বচ্ছ রাখতে লটারির পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে। লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুযোগ দেওয়ায় কেউই অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছে না। এছাড়াও দুর্নীতি ও অনিয়ম রোধে এ পদ্ধতি কার্যকর বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

লটারির ফলে শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দের স্কুলে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়। তবে অনেক সময় পছন্দের স্কুলে ভর্তির সুযোগ না পাওয়ায় কিছু শিক্ষার্থী ও অভিভাবক হতাশ হন। এই বিষয়টি মাথায় রেখেই পাঁচটি স্কুল পছন্দ করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

লটারির দিন শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতি

লটারির ফলাফল জানার দিন অভিভাবকদের মধ্যে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা কাজ করে। শিক্ষার্থীর ভবিষ্যতের একটি বড় সিদ্ধান্ত এই লটারির ওপর নির্ভর করে। তাই অনেকেই সকাল থেকেই ফল জানার জন্য অপেক্ষায় থাকেন।

ফলাফল প্রকাশের পর শিক্ষার্থীদের অবশ্যই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। অন্যথায় ভর্তির সুযোগ বাতিল হয়ে যেতে পারে। তাই অভিভাবকদেরকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

বেসরকারি স্কুলের আসন খালি থাকার কারণ

প্রতি বছরই দেখা যায়, সরকারি স্কুলের আসন পূর্ণ হয়ে গেলেও বেসরকারি স্কুলে অনেক আসন খালি থেকে যায়। এর পেছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে :

১. সরকারি স্কুলের প্রতি আগ্রহ : অধিকাংশ অভিভাবক সরকারি স্কুলে সন্তানকে ভর্তি করতে আগ্রহী। কারণ সরকারি স্কুলে ভালো মানের শিক্ষা কম খরচে পাওয়া যায়।

২. খরচের বিষয় : বেসরকারি স্কুলে ভর্তি ফি ও মাসিক খরচ বেশি হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী সেখানে ভর্তি হতে পারে না।

৩. গ্রামের বেসরকারি স্কুল : গ্রামাঞ্চলের অনেক বেসরকারি স্কুলে শিক্ষার মান ততটা উন্নত নয়। তাই এসব স্কুলে ভর্তির আবেদন কম হয়।

আরও পড়ুন :  রেলস্টেশনের স্ক্রিনে ভেসে উঠলো 'ছাত্রলীগ ভয়ংকর রূপে ফিরবে'

শিক্ষার্থীদের পরবর্তী করণীয়

লটারির ফলাফল প্রকাশের পর শিক্ষার্থীদের জন্য পরবর্তী ধাপ হলো ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করা। যেসব শিক্ষার্থী লটারিতে নির্বাচিত হবে, তাদের নির্দিষ্ট কাগজপত্রসহ স্কুলে গিয়ে ভর্তি হতে হবে।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র :

আবেদন ফরমের প্রিন্ট কপি

জন্ম নিবন্ধন সনদ

দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি

অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য


অভিভাবকদের পরামর্শ

অভিভাবকদের উচিত লটারির ফলাফল জানার পর দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করা। যেসব শিক্ষার্থী লটারিতে নির্বাচিত হয়নি, তাদের হতাশ না হয়ে পরবর্তী করণীয় নিয়ে ভাবতে হবে।

স্কুল ভর্তির লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন একটি পথ উন্মুক্ত হচ্ছে। এই পদ্ধতি স্বচ্ছ ও সহজ হওয়ায় দেশের সকল শিক্ষার্থী সমান সুযোগ পাচ্ছে। অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের উচিত লটারির ফলাফল জানার পর দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া।

শিক্ষার উন্নয়নে এমন উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তবে বেসরকারি স্কুলগুলোতে শিক্ষার মান উন্নত করা এবং খরচ কমানোর ওপর জোর দিতে হবে। তবেই শিক্ষার্থীদের জন্য একটি সুষ্ঠু ও সমান শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব হবে।