যুক্তরাষ্ট্রে ওপেন এআইয়ের তথ্য ফাঁসকারী ভারতীয় বংশোদ্ভূত তরুণের রহস্যজনক মৃত্যু

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের সান ফ্রান্সিসকো শহরের বুচানন স্ট্রিট এলাকায় সুচির বালাজি নামের এক তরুণের মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সুচির বালাজি একজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক এবং তিনি চ্যাটজিপিটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওপেন এআইয়ের সাবেক কর্মী ছিলেন। মাত্র ২৬ বছর বয়সী এই তরুণ সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির অভ্যন্তরীণ অনিয়ম ও কপিরাইট লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে আলোচনায় এসেছিলেন। তার এই রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং সংবাদমাধ্যমে নানা জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে।

কীভাবে মৃত্যু হলো সুচির বালাজির?

গত ২৬ নভেম্বর পুলিশ তার মৃতদেহ উদ্ধার করলেও তা এতদিন গোপন রাখা হয়েছিল। সান ফ্রান্সিসকো পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মৃত্যুর সঠিক কারণ সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। এ ঘটনায় কেউ তাকে হত্যা করেছে, নাকি এটি আত্মহত্যা—তা নিয়ে পুলিশ এখনো কোনো বক্তব্য দেয়নি।

সুচির বালাজি ২০২০ সাল থেকে ২০২৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ওপেন এআইয়ে কর্মরত ছিলেন। প্রতিষ্ঠানটি থেকে তার বিদায়ের কয়েক মাস পরই তিনি কপিরাইট আইন লঙ্ঘনসহ বেশ কিছু গুরুতর অভিযোগ প্রকাশ করেন। তার মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করছেন, বিশেষ করে তিনি ওপেন এআই সম্পর্কে যেসব তথ্য ফাঁস করেছিলেন, সেগুলোকে কেন্দ্র করেই এই মৃত্যু রহস্য ঘনীভূত হচ্ছে।

সুচির বালাজির সাক্ষাৎকার ও তার প্রতিক্রিয়া

সুচির বালাজি তার চাকরির শেষ দিকেই বুঝতে পারেন যে, ওপেন এআই এমন কিছু কার্যক্রম পরিচালনা করছে যা যুক্তরাষ্ট্রের কপিরাইট আইন লঙ্ঘন করে। নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি সরাসরি বলেন, “ওপেন এআই যেভাবে ব্যবসা পরিচালনা করছে, তা ইন্টারনেট ইকোসিস্টেমের জন্য মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। আপনি যদি সেখানে কাজ করতেন, তাহলে আমার মতো আপনিও প্রতিষ্ঠানটি ছেড়ে দিতেন।”

এই সাক্ষাৎকারের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ কিছু বার্তা পোস্ট করেন সুচির বালাজি। তিনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সঠিক ব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তার সর্বশেষ পোস্টে তিনি চ্যাটজিপিটি এবং অন্যান্য এআই টুলের অপব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বলেন, “এটি ভবিষ্যতে পুরো এআই খাতের বাণিজ্যকে বড় ধরনের ঝুঁকিতে ফেলবে।”

আরও পড়ুন :  টাইম ম্যাগাজিনের ২০২৪ সালের বর্ষসেরা ব্যক্তি নির্বাচিত ডোনাল্ড ট্রাম্প

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে তার উদ্বেগ

সুচির বালাজি বিশ্বাস করতেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা জরুরি। তিনি বারবার বলতেন, এআই যেন মানুষের জীবনে সহায়ক ভূমিকা রাখে। তবে চ্যাটজিপিটির মতো এআই টুলের মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার, সাইবার অপরাধ এবং কপিরাইট লঙ্ঘনের মতো সমস্যাগুলোও বাড়ছে। এসব বিষয় নিয়ে তিনি সোচ্চার ছিলেন এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ ব্যাপারে আরও দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানান।

ওপেন এআইয়ের প্রতিক্রিয়া

সুচির বালাজির মৃত্যুর পর ওপেন এআই একটি বিবৃতি দিয়েছে। তারা তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে বলেছে, “আমরা এই হৃদয়বিদারক খবরে গভীরভাবে মর্মাহত। তার পরিবার কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আমাদের সমবেদনা তাদের সঙ্গে রয়েছে।” তবে প্রতিষ্ঠানটি সুচির বালাজির মৃত্যুর কারণ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

মামলার প্রসঙ্গ ও সুচির বালাজির ভূমিকা

২০২২ সাল থেকে ওপেন এআই-এর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা চলছে। এসব মামলার মূল বিষয়বস্তু হলো কপিরাইট আইন লঙ্ঘন এবং এআই প্রযুক্তির অপব্যবহার। সুচির বালাজি এসব মামলায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছিলেন। তার স্বীকারোক্তি মামলাগুলোতে নতুন গতিও এনেছিল। ফলে তার মৃত্যুকে অনেকেই মামলার সঙ্গে সম্পর্কিত বলে মনে করছেন।

এআই প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ ও চ্যালেঞ্জ

সুচির বালাজির মৃত্যুর ঘটনা আবারও এআই প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যে শুধু মানুষের জীবন সহজ করছে তা নয়, এর অপব্যবহারও দিন দিন বাড়ছে। সুচিরের মতো তরুণ যারা এআই নিয়ে কাজ করেন, তাদের জন্য এটি একটি সতর্কবার্তা হতে পারে।

এআই প্রযুক্তি নিয়ে অনেক সম্ভাবনা থাকলেও এর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা বড় চ্যালেঞ্জ। সুচির বালাজি এই চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে সবসময় সতর্ক ছিলেন। তার মৃত্যু সেই চ্যালেঞ্জগুলোকে আরও গভীরভাবে উপলব্ধি করার সুযোগ এনে দিয়েছে।