বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) আজ থেকে গাজীপুরের শিববাড়ি থেকে ঢাকার এয়ারপোর্ট ও গুলিস্তান পর্যন্ত নতুন এসি বাস সার্ভিস চালু করছে। এটি গাজীপুরসহ আশপাশের এলাকার যাত্রীদের জন্য একটি স্বস্তির খবর। উন্নত সেবা প্রদানের লক্ষ্য নিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এই নতুন বাস সার্ভিসটি শুরু হয়েছে।
আজ রবিবার, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এই সার্ভিসের উদ্বোধন করবেন। শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা নোবেল দে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গন্তব্য ও রুটের বিবরণ
বিআরটিসি’র এই এসি বাসগুলো গাজীপুরের শিববাড়ি থেকে ঢাকার এয়ারপোর্ট পর্যন্ত বিআরটি লেন দিয়ে চলবে। এই রুটটি ২০.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ। এরপর এয়ারপোর্ট থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত আরও ২২ কিলোমিটার পথ বাসগুলো চলাচল করবে। অর্থাৎ, মোট যাত্রাপথ ৪২.৫ কিলোমিটার।
প্রাথমিকভাবে ১০টি এসি বাস দিয়ে সার্ভিসটি চালু করা হচ্ছে। তবে যাত্রী চাহিদা ও স্টেশনগুলো পুরোপুরি প্রস্তুত হওয়ার পর বাসের সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
যাত্রীদের জন্য ভাড়া নির্ধারণ
যাত্রাপথ অনুযায়ী ভাড়া তুলনামূলক সাশ্রয়ী রাখা হয়েছে। শিববাড়ি থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত যাত্রার ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৭০ টাকা। আর শিববাড়ি থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত ভাড়া হবে ১৪০ টাকা। এই ভাড়া অন্যান্য এসি বাসের তুলনায় কিছুটা কম। ফলে এটি সাধারণ যাত্রীদের জন্য আর্থিকভাবে সহনশীল বলে মনে করা হচ্ছে।
উন্নত সেবার প্রতিশ্রুতি
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যাত্রীদের আরামদায়ক সেবা প্রদানের জন্য এই বাসগুলো আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন। এসি বাসগুলোতে উন্নত আসন এবং যাত্রীর আরামের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা রাখা হয়েছে।
মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, বাস চলাচলের রুটে থাকা স্টেশনগুলো পুরোপুরি প্রস্তুত হলে এবং যাত্রীদের চাহিদা বাড়লে বাসের সংখ্যা ধাপে ধাপে বৃদ্ধি করা হবে। এটি যাত্রীদের সুবিধা আরও বাড়াবে এবং দ্রুত যাতায়াত নিশ্চিত করবে।
যাত্রীদের প্রতিক্রিয়া
নতুন এই বাস সার্ভিস নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। গাজীপুরের বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরে উন্নত বাস সার্ভিসের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। অনেক যাত্রী মনে করছেন, এই বাসগুলো চালু হলে যাতায়াতের সময় কমবে এবং আরামের সঙ্গে ঢাকায় যাতায়াত করা সম্ভব হবে।
একজন গাজীপুরের বাসিন্দা জানিয়েছেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরেই একটি নির্ভরযোগ্য পরিবহন ব্যবস্থার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। বিআরটিসি’র এই উদ্যোগ আমাদের জীবনে অনেক পরিবর্তন আনবে।”
চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা
নতুন এই বাস সার্ভিস চালু হলেও এর কার্যক্রম পরিচালনায় কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বিআরটি লেনের পূর্ণ ব্যবহার, সঠিক সময়ে বাস চলাচল এবং ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার বিষয়গুলো মন্ত্রণালয়ের নজরে রাখতে হবে।
তবে, মন্ত্রণালয়ের দাবি, এই প্রকল্পের সফল বাস্তবায়ন ঢাকার যানজট কমাতে ভূমিকা রাখবে। যাত্রীদের জন্য আরামদায়ক এবং সময় সাশ্রয়ী পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
বিআরটিসি’র এসি বাস সার্ভিসের সাফল্যের উপর ভিত্তি করে সারা দেশে এই ধরনের আরও উন্নত বাস সার্ভিস চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। এতে করে রাজধানীসহ অন্যান্য শহরের যাত্রীদের জন্য আরামদায়ক এবং সাশ্রয়ী পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
বিআরটিসি’র নতুন এই উদ্যোগ দেশের পরিবহন ব্যবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। গাজীপুর থেকে ঢাকার যাত্রীদের জন্য এটি শুধু একটি আরামদায়ক যাত্রাপথ নয়, বরং এটি সময় এবং অর্থের সাশ্রয় নিশ্চিত করার একটি দৃষ্টান্ত। উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম চাবিকাঠি। আশা করা যায়, বিআরটিসি’র এসি বাস সার্ভিস সেই লক্ষ্য পূরণে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।