পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে ১৫ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সম্মেলন। এই সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়ার মুসলমানদের মধ্যে ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা এবং হিন্দুত্ববাদের বিরুদ্ধে যৌথভাবে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়। পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষ্য নিয়েও আলোচনায় বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।
রবিবার (১৫ ডিসেম্বর) পাকিস্তান ন্যাশনাল কাউন্সিল অব আর্টস অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত এই আলোচনাসভায় অংশগ্রহণ করেন দুই দেশের বিশিষ্ট বহু ব্যক্তিবর্গ। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে শিক্ষাবিদ, সমাজকর্মী এবং রাজনৈতিক নেতারা পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক শক্তিশালী করার জোরালো আহ্বান জানান। বিশেষত ভারতীয় হিন্দুত্ববাদের প্রভাব মোকাবিলা এবং মুসলিম ঐক্য প্রতিষ্ঠায় তাদের বক্তব্যগুলো সম্মেলনে উল্লেখযোগ্য হয়ে ওঠে।
বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক: নতুন দিগন্ত
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক অনেকটাই দূরত্বের মধ্যে ছিল। দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক মতবিরোধ দীর্ঘদিন ধরে এই সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উক্ত পরিস্থিতি কিছুটা বদলেছে। ভারতীয় হিন্দুত্ববাদের বিস্তার এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর এর নেতিবাচক প্রভাব দুই দেশকে কাছাকাছি আনতে সহায়তা করেছে বলে মত বিশ্লেষকদের।
বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা এই সম্মেলনে যে বার্তা দিয়েছেন তা হলো, দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে মুসলমানদের ঐক্যের বিকল্প নেই। বিশেষ করে ভারতের সাম্প্রতিক নীতিমালা এবং তাদের দেশের সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের বিরুদ্ধে যৌথ পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান তারা।
হিন্দুত্ববাদ: বর্তমান পরিস্থিতি এবং প্রভাব
সম্মেলনে বক্তারা বলেন, হিন্দুত্ববাদ ভারতের একটি রাজনৈতিক মতাদর্শ যা দেশটির মুসলমান, খ্রিস্টান ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে এখন উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিজেপি সরকারের আমলে এই মতাদর্শ আরও প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে। মুসলমানদের মৌলিক অধিকার থেকেও বঞ্চিত করা হচ্ছে ভারতে এমনটাই অভিযোগ করেন তারা।
বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা আরও উল্লেখ করেন যে, হিন্দুত্ববাদের এই উত্থান শুধু ভারতের মুসলমানদের জন্য নয়, বরং সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার জন্য হুমকিস্বরূপ। তারা বলেন, “আমাদের ঐক্য ছাড়া এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। পাকিস্তানের সঙ্গে মিলিতভাবে কাজ করলে আমরা একটি শক্ত শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে পারি।”
ইসলামাবাদের এই সম্মেলনে বাংলাদেশ থেকে যে বিশাল প্রতিনিধি দল অংশ নেয়, তা দুই দেশের সম্পর্কের উন্নতির দিকনির্দেশ করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ডিন ড. শাহেদুজ্জামানসহ বেশ কয়েকজন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ এই সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, “দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি ও উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে পারস্পরিক সহযোগিতা খুবই জরুরি।”
সম্মেলনে আরও আলোচনা হয় মুসলিম বিশ্বের আসন্ন ভবিষ্যৎ নিয়ে। অংশগ্রহণকারীরা বলেন, “যদি আমরা একত্রে কাজ করি, তবে হিন্দুত্ববাদ বা যে কোনো ধরণের বর্ণবাদী আদর্শ আমাদের এই ঐক্যকে বিনষ্ট করতে পারবে না।”
ছাত্র আন্দোলন ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রভাব
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সময়ের ছাত্র আন্দোলন এবং রাজনৈতিক পরিবর্তনের ধারাবাহিকতাও সম্মেলনে আলোচনার বিষয় ছিল। প্রতিনিধিরা আরও বলেন, “বাংলাদেশের যুবসমাজ এখন নতুন চেতনায় উদ্বুদ্ধ। তারা সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার। পাকিস্তানের সঙ্গেও সম্পর্ক উন্নয়নে তাদের আগ্রহ রয়েছে।”
পাকিস্তানের পক্ষ থেকেও এই সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়ে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া এসেছে। পাকিস্তানের নেতারা বলেন, “বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠনের মাধ্যমে আমরা শুধু আমাদের ঐতিহাসিক ভুলগুলোই সংশোধন করতে পারব না, বরং ভবিষ্যতে একটি শক্তিশালী সম্পর্ক গড়তে পারব।”