বর্তমান বিশ্ব ফুটবলে প্রতিভার আকাশে এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম লামিনে ইয়ামাল। মাত্র ১৭ বছর বয়সেই তিনি গুগল সার্চে শীর্ষস্থান দখল করে ফেলেছেন। ২০২৪ সালে ফুটবল দুনিয়ার সবচেয়ে বেশি আলোচিত এবং অনুসন্ধান করা ফুটবলারের খেতাব পেয়েছেন এই উদীয়মান স্প্যানিশ তারকা। গোটা বিশ্বজুড়ে ফুটবলের ভক্তরা তাকে এক বিস্ময় হিসেবে বিবেচনা করছেন। তার এই উত্থান যেকোনো রূপকথার গল্পকেও হার মানাবে।
ইয়ামালের জন্ম স্পেনের মাটারা প্রদেশে। তার পরিবার ছিল উদ্বাস্তু। তার লবাবা মরক্কোর নাগরিক এবং মা নিরক্ষীয় গিনির একজন সাধারণ নারী। তারা চেয়েছিলেন সন্তানের একটি ভালো ভবিষ্যৎ। এই লক্ষ্যেই ২০১৪ সালে গোটা পরিবার বার্সেলোনায় স্থায়ী হয়। তখন ইয়ামালের বয়স ছিল মাত্র সাত বছর।
বার্সেলোনায় পা দিয়েই ইয়ামালের ফুটবলের যাত্রা শুরু হয়। তাকে ভর্তি করানো হয় বার্সেলোনার বিখ্যাত ফুটবল অ্যাকাডেমি “লা মাসিয়া”-তে। এই অ্যাকাডেমি থেকেই উঠে এসেছে লিওনেল মেসির মতো কিংবদন্তিরা। ছোট বয়স থেকেই ইয়ামাল ফুটবল মাঠে নিজের প্রতিভার প্রমাণ দিতে শুরু করেন।
ফুটবল মাঠে তার রেকর্ড
২০১৪ সালে বার্সেলোনার যুব দলের হয়ে খেলতে নেমেই ইয়ামাল ফুটবল বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। খুব অল্প সময়েই তিনি নিজের প্রতিভা দিয়ে কোচদের মন জয় করেন। বার্সেলোনার সিনিয়র দলে মাত্র ১৫ বছর বয়সে খেলার সুযোগ পান তিনি। এর মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন ক্লাবটির সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড়।
তার প্রতিভা শুধু ক্লাব পর্যায়েই সীমাবদ্ধ ছিল না। স্পেনের বয়সভিত্তিক দলে তার খেলা দেখার পর মরক্কোর ফুটবল ফেডারেশন তাকে জাতীয় দলে খেলার আমন্ত্রণ জানায়। তবে ইয়ামাল তার জন্মভূমি স্পেনকেই বেছে নেন।
গুগলের “ইয়ার ইন সার্চ” রিপোর্টে শীর্ষে
প্রতি বছরের শেষে গুগল একটি বিশেষ তালিকা প্রকাশ করে, যেখানে দেখা যায়, সারা বিশ্বে মানুষ ঠিক কী বিষয়ে সবচেয়ে বেশি খোঁজ করেছে। ২০২৪ সালে ফুটবলারদের মধ্যে শীর্ষে আছেন লামিনে ইয়ামাল। শুধু ফুটবলার নয়, তিনি বিশ্বের সেরা দশ অ্যাথলেটদের মধ্যেও জায়গা করে নিয়েছেন এই বয়সেই।
এই তালিকায় ইয়ামালের সতীর্থ নিকো উইলিয়ামস রয়েছেন ছয় নম্বরে এবং ব্যালন ডি’অর জয়ী রদ্রি দশম স্থানে। তবে পুরো তালিকার শীর্ষে আছেন আলজেরিয়ান বক্সার ইমানে খেলিফ। তার পরে আছেন কিংবদন্তি বক্সার মাইক টাইসন এবং আমেরিকান জিমনাস্ট সিমনে বাইলস।
ইয়ামালের প্রতিভা: ফুটবলের নতুন যুগের সূচনা
ইয়ামালকে নিয়ে ফুটবল বিশেষজ্ঞরা বলেন, তিনি আধুনিক ফুটবলের ভবিষ্যৎ। তার খেলার ধরন, মাঠে বল নিয়ন্ত্রণ এবং প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করার দক্ষতা সত্যিই অসাধারণ। মাত্র ১৭ বছর বয়সে তিনি যে প্রতিভার পরিচয় দিয়েছেন, তা বড় বড় খেলোয়াড়দেরও চমকে দিয়েছে।
বার্সেলোনার হয়ে তার খেলাগুলোতে দেখা গেছে, তিনি একদিকে দলকে নেতৃত্ব দিতে পারেন, অন্যদিকে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে গোল করতেও সক্ষম। তার প্রতিভা এবং পরিশ্রম তাকে একদিন বিশ্ব ফুটবলের সেরা খেলোয়াড়দের তালিকায় স্থায়ীভাবে জায়গা করে দেবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
কঠিন পথ পেরিয়ে সফলতা
ইয়ামালের ব্যক্তিজীবন কিন্তু কোনোভাবেই সহজ ছিল না। উদ্বাস্তু পরিবারের সন্তান হওয়ায় তাকে ছোটবেলা থেকেই নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। তবে তার মা-বাবার নিরলস প্রচেষ্টা এবং তার নিজস্ব অধ্যবসায় তাকে আজকের অবস্থানে পৌঁছে দিয়েছে।
ফুটবল অ্যাকাডেমিতে যোগ দেওয়ার পর তিনি প্রতিদিন কড়া অনুশীলন করতেন। কখনো হতাশ হননি এবং লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হননি। তিনি জানতেন, তার সামনে একদিন বড় সুযোগ আসবে। সেই সুযোগ কাজে লাগাতে তিনি সব সময় প্রস্তুত ছিলেন।
গেটা বিশ্বজুড়ে তার প্রভাব
ইয়ামালের উত্থান শুধু স্পেন নয়, পুরো বিশ্ব ফুটবলের জন্যই একটি বড় ঘটনা। তার প্রতিভা দেখে তরুণ ফুটবলপ্রেমীরা উৎসাহিত হচ্ছে। বিশেষ করে মুসলিম ফুটবলার হিসেবে তার এই সাফল্য মুসলিম তরুণদের জন্য একটি অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মাত্র ১৭ বছর বয়সে গুগলের শীর্ষে উঠে আসা লামিনে ইয়ামাল প্রমাণ করেছেন, প্রতিভা এবং পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই। তার জীবনের গল্প আমাদের শেখায়, কঠিন পথ পেরিয়ে সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছানো সম্ভব। স্পেনের জাতীয় দলে এবং বার্সেলোনার হয়ে তার অবদান ভবিষ্যতে ফুটবল ইতিহাসের পাতায় অমলিন হয়ে থাকবে।
আশা করা যায়, তিনি আরও অনেক রেকর্ড ভাঙবেন এবং ফুটবলপ্রেমীদের হৃদয়ে বিশেষ জায়গা করে নেবেন। লামিনে ইয়ামাল শুধু একজন ফুটবলার নন; তিনি একজন অনুপ্রেরণা, একটি প্রতীক এবং বিশ্ব ফুটবলের নতুন দিনের সূচনা।