ভারতের মতো দেশে সরকারি চাকরি এক স্বপ্নের মতো। দেশের লাখ লাখ তরুণ-তরুণী বছরের পর বছর কঠোর পরিশ্রম করে শুধুৃমাত্র সরকারি চাকরি পাওয়ার জন্য। কিন্তু সেই সরকারি চাকরি কখনো কারো জীবনে ‘কাল’ হয়ে দাঁড়াতে পারে, তা হয়তো কল্পনাও করা যায় না। ঠিক এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে ভারতের বিহার রাজ্যে। স্কুল শিক্ষক হিসেবে সরকারি চাকরি পাওয়া এক যুবককে বন্দুকের ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক বিয়ে করার চাঞ্চল্যকর ঘটনা এখন সারা দেশের গন্ডি পেড়িয়ে সারাবিশ্বেই আলোচনার বিষয়। এই ঘটনাটি একদিকে যেমন হাস্যকর, অন্যদিকে তা সামাজিক ও আইনি প্রেক্ষাপটেও অপরাধমূলক।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, অবনীশ কুমার নামের ওই যুবক সম্প্রতি পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে স্কুল শিক্ষক হিসেবে চাকরি পান। এই চাকরি পাওয়ার পর তাঁর জীবনে এক অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটে। ঘটনার দিন, অর্থাৎ শুক্রবারের এক সকালে, অবনীশ প্রতিদিনের মতোই নিজের বাড়ি থেকে স্কুলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হন।
পথে হঠাৎ করেই বেশ কয়েকজন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি তাঁকে ঘিরে ধরে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই এক ব্যক্তি বন্দুক তাক করে তাঁকে একটি গাড়িতে উঠতে বাধ্য করে। বাধ্য হয়ে অবনীশ সেই গাড়িতে ওঠেন। এরপর তাঁকে সোজা নিয়ে যাওয়া হয় একটি মন্দিরে, যেখানে বিয়ের সাজে অপেক্ষা করছিলেন এক সুন্দরী তরুণী।
মন্দিরে পৌঁছানোর পর অবনীশের সামনে হাজির হন কনে সাজে গুঞ্জন নামে এক তরুণী। গুঞ্জনের দাবি, তিনি অবনীশের দীর্ঘদিনের প্রেমিকা। চার বছরের প্রেমের সম্পর্কের পর বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন অবনীশ। কিন্তু সরকারি চাকরি পাওয়ার পর অবনীশ নাকি তাদের সব সম্পর্ক অস্বীকার করে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন।
এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ গুঞ্জনের পরিবার পরিকল্পনা করে অবনীশকে অপহরণ করে এনে বিয়ে দেয়। বিয়ের সময় বন্দুকের ভয় দেখিয়ে তাঁকে বাধ্য করা হয় তরুণীর সঙ্গে মালাবদল করতে। অবনীশের দাবি, তিনি এই পুরো বিষয়টির শিকার। তিনি ওই তরুণীকে চেনেন না এবং তাঁকে জোর করে এই বিয়েতে বাধ্য করা হয়েছে।
অন্যদিকে, গুঞ্জনের বক্তব্য সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাঁর মতে, অবনীশ ও তিনি দীর্ঘদিন প্রেমের সম্পর্কে ছিলেন। তাঁরা বিয়ে করারও পরিকল্পনা করেছিলেন। তবে সরকারি চাকরি পাওয়ার পর থেকেই অবনীশ তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। বারবার ফোন করলেও তিনি সাড়া দেননি। এমনকি গুঞ্জনের পরিবারও তাঁকে নিয়ে অপমানিত বোধ করতে শুরু করে।
অবশেষে, পরিবারের চাপে গুঞ্জন এই পথ বেছে নিতে বাধ্য হন। গুঞ্জনের বক্তব্য অনুযায়ী, তিনি কেবল নিজের অধিকারের জন্যই লড়াই করেছেন। অবনীশ তাঁকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে কথা রাখেননি বলেই এমন জটিল বিতর্কিত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
এদিকে বিয়ের পর গুঞ্জন অবনীশের বাড়িতে যান। তবে সেখানেও নতুন বিপত্তি দেখা দেয়। অবনীশের বাবা-মা গুঞ্জনকে কোনোভাবেই পুত্রবধূ হিসেবে মানতে রাজি হননি। এমন পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে গুঞ্জন থানায় অভিযোগ করেন। তিনি অভিযোগ করেন, অবনীশ তাঁকে অপমান করেছেন এবং পূর্বে করা প্রতিশ্রুতি দিয়ে কথা রাখেননি।
অন্যদিকে, অবনীশ পাল্টা অভিযোগ করেন, গুঞ্জন ও তাঁর পরিবার তাঁকে অপহরণ করে জোর করে বিয়ে দিয়েছে। তিনি দাবি করেন, তাঁর কোনো দোষ নেই এবং এই পুরো বিষয়টি তাঁর জন্য মানসিক ও শারীরিক অত্যাচারের সমতুল্য।
সামাজিক প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনা সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ ভাইরাল হয়েছে। অনেকেই এই ঘটনাকে মজার ঘটনা হিসেবে দেখছেন। কেউ কেউ বলছেন, ‘বিহারে সরকারি চাকরি পাওয়া মানেই বিপদের সঙ্কেত!’ আবার অনেকেই বলছেন, এটি সামাজিক অবক্ষয়ের একটি দৃষ্টান্ত।
তবে এই ঘটনায় নারী অধিকারের প্রশ্নও সামনে এসেছে। গুঞ্জনের বক্তব্য অনুযায়ী, তিনি কেবল নিজের ভালোবাসার অধিকার ফিরে পেতে চেষ্টা করেছেন। অন্যদিকে, অবনীশের পক্ষ থেকে এটি স্পষ্ট যে, তাঁর জীবনের ওপর জোর করে একটি সম্পর্ক চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এই ঘটনাটি ভারতীয় আইনে ‘পাকড়োয়া বিবাহ’ নামে পরিচিত। বিহার এবং ভারতের আরও কয়েকটি রাজ্যে জোরপূর্বক বিয়ের এমন ঘটনা প্রায়ই শোনা যায়। তবে এটি সামাজিকভাবে যেমন নিন্দনীয়, তেমনি আইনি দিক থেকেও অপরাধ।
অপহরণ এবং জোরপূর্বক বিয়ের অভিযোগে অভিযুক্তদের কড়া শাস্তির বিধান রয়েছে। অবনীশ যদি সত্যিই এই ঘটনার শিকার হয়ে থাকেন, তবে গুঞ্জন এবং তাঁর পরিবারকে শাস্তি পেতে হতে পারে। আবার যদি গুঞ্জনের অভিযোগ সঠিক হয়, তবে এটি প্রতারণার মামলা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।